বরিশাল জেলা ও মহানগরে স্থায়ী-অস্থায়ী ৭১ কোরবানীর পশু হাট

বরিশাল জেলা ও মহানগরে স্থায়ী-অস্থায়ী ৭১ কোরবানীর পশু হাট

বরিশাল জেলা ও মহানগরে এবার ৭১টি স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাট বসছে। জেলার ১০ উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩টি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ঈদুল আযহা উপলক্ষে এ পর্যন্ত ৪৮টি অস্থায়ী হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। জেলায় আরও অস্থায়ী হাটের সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জেলা এবং মহানগরীর অস্থায়ী হাটগুলো এখন পর্যন্ত জমে ওঠেনি। তবে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে আসছেন হাটগুলোতে। এখনও অস্থায়ী হাটগুলোতে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী অবকাঠামো। ঈদের আগের ৪দিন কোরবানির পশুর হাট জমজমাট থাকবে বলে আশা করছেন তারা। 

বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় সারা বছর একটি পশুরহাট বসে বাঘিয়া এলাকায়। এর বাইরে এবার কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের জন্য মোট ৫টি আবেদন জমা পড়েছে সিটি করপোরেশনে। ৫টি আবেদনের মধ্যে নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইল বালুর মাঠ এবং রূপাতলী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নীচে দুটি অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার। 
এদিকে জেলার ১০ উপজেলায় স্থায়ী পশুরহাট রয়েছে ২২টি। এর বাইরে এবার ঈদ উপলক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৬টি অস্থায়ী পশুরহাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার অফিস সহকারী আকতারুজ্জামান জানান, উপজেলা প্রশাসন হয়ে পশুর হাটের আবেদনগুলো জেলা প্রশাসনে আসে। এখান থেকে যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেন জেলা প্রশাসক। গতকাল পর্যন্ত জেলার ১০ উপজেলায় ৪৬টি অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখনও একটি-দুটি করে ইজারার আবেদন আসছে বলে তিনি জানান। 

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জাল নোট শনাক্ত এবং ছিনতাইকারী রোধে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। 

জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পশুরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থায়ী পশুরহাটগুলোতে কিছু পশু বেঁচাকেনা হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম যাচাই এবং পশু নির্বাচনে বিভিন্ন হাট ঘুরছেন। কিনবেন সুবিধাজনক সময়ে। এসব হাটে স্থানীয় খামারি এবং গৃহস্থের গরু-ছাগল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জাতের এবং বিভিন্ন আকারের পশু আনা হচ্ছে। 

গত সোমবার বিকেলে জেলার বানারীপাড়া উপজেলার গুয়াচিত্রা স্থায়ী পশুরহাটে দেখা যায়, স্থানীয় গৃহস্থের ষাঁড়ই বেশি। স্থানীয় বিভিন্ন খামারের পশুও এসেছে অনেক। ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ষাঁড় ও গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দামের ষাঁড় উঠেছে গুয়াচিত্রা পশু হাটে। হাটে ৭০-৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ষাঁড় গরুর সংখ্যাই বেশি। 

কুষ্টিয়া থেকে ২০টি ষাঁড় নিয়ে গত রবিবার গুয়াচিত্রা হাটে এসেছেন মন্টু বেপারী। গতকাল পর্যন্ত ৫টি ষাঁড় বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে। তার একটি ষাঁড়ের দাম হাঁকছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ষাঁড়টি ১০ মন ওজন হবে বলে দাবি করছেন তিনি। 

মন্টু বেপারীর মতে, আগের বছরের তুলনায় পশুর দাম ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেড়েছে। পশু খাদ্যের সংকট এবং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার খামারিরা তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। 

আজ ৬ জুলাই থেকে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত পশুরহাট জমজমাট হবে বলেও আশা করেন কুষ্টিয়ার আরেক গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, তারা বাজার দেখছেন। সামান্য কিছু লাভ পেলেই পশু ছেড়ে দেবেন। 

বরিশাল থেকে গুয়াচিত্রা পশু হাট যাচাই করতে যাওয়া আবুল বাশার ও শাহিন হাওলাদার বলেন, বাজারে প্রচুর সংখ্যক পশু আছে। তবে দাম হাঁকা হচ্ছে বেশি। তারা বাজার যাচাই করছেন। যে হাটে সহনীয় দাম হবে সেখান থেকে কোরবানির পশু কিনবেন তারা। 

তারা বলেন, পাইকররা দাম ছাড়ছে না। আরও বাড়ার আশায় আছেন। শেষ পর্যন্ত কোরবানির ৩ দিন আগে বেচা-কেনা জমে উঠবে বলে তারা মনে করেন। 

জেলা এবং মহানগরীর সবগুলো পশুর হাটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।